শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার ও ঘরবাড়ি—সবকিছুই ভেঙে পড়েছে। শহরের রাস্তায় জমে থাকা ধ্বংসাবশেষ সরানোই এখন প্রধান কাজ।
তবে যুদ্ধবিরতির পরও গাজার আকাশে মাঝে মাঝে উড়তে দেখা যাচ্ছে ইজরায়েলি ড্রোন। অনেকেই বলছেন, এটি যুদ্ধবিরতির মধ্যেও এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে। তবুও মানুষ আশা হারাতে চান না।
এক বৃদ্ধ প্যালেস্টাইনি বলেন, “আমরা অনেক কেঁদেছি, অনেক হারিয়েছি। এখন চাই শুধু একটু শান্তি, যেন আমাদের নাতিরা আবার স্কুলে যেতে পারে।”
আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি কেবল প্রথম ধাপ। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং গাজার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।”
তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত। কারণ দুই পক্ষই পরস্পরের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক আলোচনার ওপর।
গাজার সাধারণ মানুষদের কাছে তবে এখন সবকিছুর ওপরে একটাই স্বপ্ন — বাঁচতে চায়, ফিরতে চায় স্বাভাবিক জীবনে। তাদের জন্য এখন স্কুলে যাওয়া সন্তানদের হাসি, বাজারে মানুষের ভিড়, কিংবা বিকেলে আজানের ধ্বনি—এসবই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
গাজা শহরের এক শিক্ষক, ইউসুফ আল-মাহমুদ, ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা ঘর হারিয়েছি, প্রিয়জন হারিয়েছি, কিন্তু আমরা আশা হারাইনি। যতক্ষণ এই ভূমি আছে, ততক্ষণ আমরা ফিরে আসব।”
যুদ্ধবিরতির পর অনেক দেশে প্যালেস্টাইনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশ হয়েছে। লন্ডন, ইস্তাম্বুল, কায়রো এবং ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে মানুষ রাস্তায় নেমে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং স্থায়ী শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে গাজার পুনর্গঠন একটি বিশাল কাজ হতে চলেছে। শিশু ও নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। অনেক শিশু বাবা-মা হারিয়েছে, অনেক নারী গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই যুদ্ধবিরতি কি সত্যিই শান্তির পথে গাজাকে ফিরিয়ে আনবে? নাকি এটি হবে আরেকটি সাময়িক বিরতি, যার পর আবার আগুন ঝরবে আকাশ থেকে?
গাজার মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর জানে না। তবে তাদের চোখে এখনো একটুখানি আলো জ্বলছে—যুদ্ধের ধোঁয়ার মাঝেও নতুন ভোরের আশায়।