
দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে গাজা উপত্যকায় অবশেষে একটুখানি শান্তির আলো দেখা দিয়েছে। ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেওয়া লাখো প্যালেস্টাইনি তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে চলা বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও অনাহারে ক্লান্ত মানুষগুলো এখন শুধু ঘরে ফেরার আকাঙ্ক্ষায় ছুটছেন। কেউ হাতে শিশু ধরে আছেন, কেউ সঙ্গে নিচ্ছেন সামান্য কিছু কাপড় ও পানি। গাজার উত্তর দিকের শহরগুলোর দিকে তাদের এই ফেরার পথ নিঃশব্দ হলেও চোখে মুখে ভেসে উঠছে এক অদম্য দৃঢ়তা।
একজন নারী, নাম আমিনা, যিনি দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে কয়েক মাস আশ্রয়ে ছিলেন, জানালেন— “আমার ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, কিন্তু আমি তবুও ফিরব। কারণ সেটাই আমার ঘর, আমার জন্মভূমি।”
যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি অনুসারে হামাস ২০ জন ইজরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দেবে এবং ইজরায়েল প্রায় দুই হাজার প্যালেস্টাইনি বন্দীকে ছেড়ে দেবে। এই বন্দী বিনিময়কে অনেকে শান্তি পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছেন। তবে উভয় পক্ষের মধ্যকার অবিশ্বাস এখনো গভীর। বিশেষ করে গাজার প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আলোচনায় “বিদেশি তত্ত্বাবধান” বা “অস্থায়ী শাসন কাঠামো”র প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ায় হামাস ও অন্যান্য প্যালেস্টাইনি দল তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে।
তারা বলেছে, “গাজা আমাদের মাটি, এখানে কোনো বিদেশি শাসন আমরা মানব না।”
যুদ্ধবিরতির খবরে গাজাবাসীর মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি এলেও, বাস্তব পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। উত্তর গাজা প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার ভবন ভেঙে পড়েছে, সড়কগুলো অচল হয়ে গেছে। পানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্যের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে পাচ্ছে না — কেউ নিহত, কেউ নিখোঁজ, কেউ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
গাজার হাসপাতালগুলো এখনো ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র ঘাটতিতে ভুগছে। কিছু হাসপাতাল জেনারেটরের ওপর নির্ভর করে চলছে, কিন্তু জ্বালানির অভাবে সেটিও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলো সীমান্ত দিয়ে সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু ইজরায়েলি নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে কড়াকড়ি থাকায় তা যথাসময়ে পৌঁছাচ্ছে না।
মানবিক সহায়তার পাশাপাশি এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পুনর্গঠন। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ৭০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।